আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পদ ১৫ বছরে বেড়েছে ৩০ গুণ: বৈধ-অবৈধ সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পদ ১৫ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ। সরকারি হিসাবেই এ তথ্য উঠে এসেছে, তবে ধারণা করা হচ্ছে এর বাইরেও আরও বিপুল অবৈধ সম্পদ রয়েছে তাঁর। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, নানক ও তাঁর স্ত্রীর যৌথ সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫১ টাকা। কিন্তু ২০২৪ সালের হলফনামায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৫১ টাকায়।
জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা, দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতার ছায়ায় থেকে সরকারি সুবিধা ভোগ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালে ঢাকা-১৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে আসার পর থেকেই তিনি নিজেকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। শেখ হাসিনার সরকারের ছায়াতলে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান, যেখানে তিনি বিভিন্ন টেন্ডার সিন্ডিকেট পরিচালনায় কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ দল আমাদের রাজনৈতিক ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার হতাশাব্যঞ্জক প্রতিবেদন
২০০৮ সালে নানকের দাখিলকৃত হলফনামায় দেখা যায়, তাঁর ও স্ত্রীর যৌথ সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৩ লাখ টাকার মতো এবং বার্ষিক আয় ছিল মাত্র দুই লাখ টাকা, যা কৃষিকাজ ও ছোটখাটো ব্যবসা থেকে আসত বলে উল্লেখ করা হয়। তবে পরবর্তী পাঁচ বছরের ক্ষমতায় নানকের সম্পদ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় তাঁর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ছয় কোটি ১৮ লাখ টাকায়।
নানক সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে স্ত্রী চাকরি, কৃষি ও মৎস্য ব্যবসা উল্লেখ করলেও এর প্রকৃত উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। ২০১৪ সালের পর তাঁর বার্ষিক আয়ও ৭ লাখ টাকায় পৌঁছে। তবে ২০২৪ সালে আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নানকের সম্পদ এক লাফে প্রায় ৩০ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার টাকায়।
এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে নানক রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। বর্তমানে তাঁর রাজধানীর উত্তরায় ছয়তলা বাড়ি, মোহাম্মদপুরে আটতলা বাড়ি, কক্সবাজারে জমি, জন্মস্থান বরিশালে বাড়ি ও ভূসম্পত্তি রয়েছে। তাঁর দাবি অনুযায়ী, এর বেশির ভাগই পৈতৃক সম্পত্তি, তবে অনেকে বিশ্বাস করেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন তিনি।
এর বাইরে, বিরোধী দলে থাকার সময় নানকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলাও দায়ের হয়, যার বেশির ভাগ থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন কোনো প্রকার জবাবদিহি ছাড়াই। স্থানীয় ও রাজনৈতিক মহলে নানকের সম্পদের প্রকৃত উৎস এবং বৈধতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।