
রিল ও শর্টস দেখা আমাদের মস্তিষ্কে কীভাবে প্রভাব ফেলে?
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের শর্ট ভিডিওগুলো আমাদের বিনোদনের নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ফেসবুকে রিলের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৩ মিনিট, ইনস্টাগ্রামে ৯০ সেকেন্ড এবং ইউটিউব শর্টস এক মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওগুলো দেখতে শুরু করলে আমরা সহজেই আসক্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু এই আসক্তি আমাদের মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কী প্রভাব ফেলে? চীনের গবেষকদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে রিল ও শর্টস দেখার অভ্যাসের বিভিন্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক।
রিল ও শর্টস দেখার ফলে মস্তিষ্কের পরিবর্তন
১. আবেগ নিয়ন্ত্রণের উপর প্রভাব
মানব মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ অংশ আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেশি পরিমাণে রিল ও শর্টস দেখার ফলে এই অংশের কার্যকারিতা কমতে পারে, যা মানুষের ধৈর্য কমিয়ে দিতে পারে। ফলে দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাট বিষয়েও হতাশা, রাগ বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
২. মনোযোগের ব্যাঘাত
নিয়মিত ছোট ছোট ভিডিও দেখার ফলে মস্তিষ্ক সহজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। দ্রুত পরিবর্তনশীল কনটেন্টে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কিছুতে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৩. তুলনামূলক মনোভাব ও ঈর্ষা
গবেষণায় দেখা গেছে, রিল ও শর্টসের কারণে অনেক মানুষ অন্যদের জীবনযাত্রার সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে শুরু করে। অন্যদের সাফল্য বা আনন্দ দেখে অনেকের মধ্যে ঈর্ষা ও হতাশা তৈরি হয়। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. আসক্তির ঝুঁকি
ছোট ছোট ভিডিওগুলো আমাদের মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’-কে উদ্দীপিত করে। মস্তিষ্ক দ্রুত বিনোদনমূলক কন্টেন্ট পেতে চাইতে থাকে, ফলে আমরা একটার পর একটা রিল দেখে যাই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আসক্তিতে পরিণত হতে পারে, যা বাস্তব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে নেয়।
৫. কিশোর-কিশোরীদের উপর প্রভাব
কিশোর-কিশোরীরা সাধারণত প্রযুক্তির প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় এবং তাদের মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট অংশ বেশি সক্রিয় থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর বয়সে শর্ট ভিডিওর প্রতি আসক্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর ফলে তাদের শেখার ক্ষমতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৬. তথ্য গ্রহণের ধরণে পরিবর্তন
দীর্ঘদিন ধরে রিল বা শর্টস দেখার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক দ্রুত তথ্য গ্রহণের অভ্যাস তৈরি করে। ফলে দীর্ঘ ও জটিল তথ্য বুঝতে সমস্যা হতে পারে। বই পড়ার মতো গভীর মনোযোগের কাজগুলো কঠিন মনে হতে পারে।

শর্টস ও রিল দেখার ইতিবাচক দিক
যদিও শর্ট ভিডিওর আসক্তি সমস্যার কারণ হতে পারে, তবে এর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন—
✅ শিক্ষামূলক কন্টেন্ট দ্রুত গ্রহণ করা যায়।
✅ বিনোদনের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো সম্ভব।
✅ ট্রেন্ড সম্পর্কে আপডেট থাকা যায়।
তবে অতিরিক্ত রিল বা শর্টস দেখার ফলে আমাদের অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে। বিশেষত কিশোর-কিশোরীদের জন্য এটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ।