প্রায় ৩৫ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবির

প্রায় ৩৫ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় প্রকাশ্যে এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে বর্তমান শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে সাকি স্বাক্ষরিত এই তথ্য জানানো হয়েছে। তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল দলের অংশগ্রহণে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে চায় ছাত্রশিবির।
আরও পড়ুন, বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেশ সাজাবে : মির্জা আব্বাস
ছাত্রশিবিরের বর্তমান কমিটির পরিচয়: বিবৃতিতে জানা যায়, শাখা সভাপতি হারুনুর রশিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান বাংলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এবং প্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন দর্শন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
ছাত্রশিবিরের অঙ্গীকার: ছাত্রশিবিরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে সুস্থ ধারার রাজনীতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাঁরা আরও বলেন, আবাসিক হলগুলোতে দখলদারি, চাঁদাবাজি এবং মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধে কাজ করতে ছাত্রশিবির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম: ছাত্রশিবিরের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণামূলক শিক্ষাব্যবস্থা, সুস্থ সংস্কৃতির প্রসার এবং নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করবে সংগঠনটি। তাঁরা বিশ্বাস করেন, ছাত্র সংসদকেন্দ্রিক সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির সঠিক চর্চা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে শিবিরের বক্তব্য: বিবৃতিতে ছাত্রশিবির দাবি করে যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী আদর্শিকভাবে শিবিরকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের গুজব রটিয়ে এসেছে। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও, এটি অনুমোদিত হয়নি।
রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান: ছাত্র রাজনীতির যৌক্তিক সংস্কারে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রশিবির বিবৃতিতে বলে, গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের কারণে রাজনীতির প্রকৃত সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে এবং শহীদদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে একটি সংস্কারকৃত রাজনৈতিক চর্চার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের মুখে পুনরায় স্বীকৃতি: গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম ফেসবুকে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করেন। এরপর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদও একইভাবে পরিচয় দেন। ২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তথ্য প্রকাশ করা হয়, যা ছাত্রশিবিরের ক্যাম্পাসে সক্রিয় উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে এই বিবৃতির মাধ্যমে তারা পুনরায় প্রকাশ্যে আসে এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক চর্চা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।