বিশ্ব

গাজা ইস্যুতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ঠেকাতে আরব বিশ্ব বদ্ধপরিকর

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ আরব বিশ্ব

গাজা সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আরব বিশ্ব একত্রিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা অনুসারে, গাজার ২.৪ মিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তর করার কথা বলা হয়েছে, যা কার্যত তাদের মাতৃভূমি থেকে চিরতরে উচ্ছেদের সামিল। তবে আরব নেতারা এই পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন।

আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া

মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মিশর, জর্ডান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারসহ অনেক দেশ ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে আটকানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল গেইথ দুবাইয়ে এক সম্মেলনে বলেন, “আমরা আরবরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করছি। ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নেব না। এটি একটি অমানবিক পদক্ষেপ।” তিনি আরও বলেন, গাজা ফিলিস্তিনেরই অংশ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে থাকার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

ট্রাম্পের হুমকি ও আরব নেতাদের প্রতিরোধ

ট্রাম্প তার প্রস্তাবের পক্ষে জোর দিয়ে বলেছেন, গাজা পরিষ্কার করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করবে। যদি মিশর ও জর্ডান ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তিনি ওই দেশগুলোর জন্য মার্কিন সহায়তা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তবে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এই হুমকিকে গুরুত্ব না দিয়ে গাজার পুনর্নির্মাণের ওপর জোর দিয়েছেন।

জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে সাফ জানিয়ে দেন, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ না করেই গাজাকে পুনর্গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, “গাজা ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এখানে ফিলিস্তিনিদের থাকার অধিকার চিরস্থায়ী।” মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসিও এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, গাজার পুনর্নির্মাণের জন্য আরব দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করবে এবং ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জোর দেবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে জাতিগত নির্মূলের চেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত।” ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তাদের কড়া অবস্থান জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে। এই পরিকল্পনার ফলে নতুন করে সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এবং এটি আরব বিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে।

ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ কী?

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তারা আর কখনোই নিজ দেশে ফিরতে পারবে না। এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য চরম অন্যায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরব বিশ্ব এখন ঐক্যবদ্ধভাবে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের মতে, ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় শুধু আরব দেশগুলো নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা জরুরি। ফিলিস্তিন সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।

উপসংহার

ট্রাম্পের গাজা বিষয়ক পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আরব বিশ্ব এই প্রস্তাবকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি রক্ষায় বিশ্ববাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হতে পারে তাদের জন্য ন্যায়বিচারের পথ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button