পূবালী, সাউথ ইস্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক রপ্তানির ৪৯ কোটি ডলার সরিয়ে নেয়

বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের রপ্তানি আয়ের ৪৯ কোটি ডলার বা প্রায় ৫৮৮০ কোটি টাকা কোম্পানির বৈদেশিক মুদ্রা পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে জমা না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখছে। কেয়া কসমেটিকস সম্প্রতি পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনে তদন্তের অনুরোধ জানায়। বিষয়টি সমাধানের জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি ব্যাংককে ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
যদিও কেয়া কসমেটিকস সরকারের ঋণখেলাপি তালিকায় রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান দাবি করেছেন যে ব্যাংকের ভুল হিসাবের কারণে তাদের নাম এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তার মতে, তিনটি ব্যাংকের কাছে কেয়া কসমেটিকসের প্রাপ্য প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা। কিন্তু উল্টো ব্যাংক দাবি করছে কেয়া কসমেটিকস তাদের কাছে ১৩৫২ কোটি টাকা ঋণখেলাপি।
এই ইস্যুতে কেয়া কসমেটিকস অভিযোগ করেছে যে তাদের রপ্তানি আয় কোম্পানির বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে জমা করা হয়নি। চিঠিতে জানানো হয়, ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পূবালী ব্যাংক কেয়া কসমেটিকসের জন্য ১৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার আদায় করলেও এই অর্থ কোম্পানির বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে স্থানান্তর করেনি। তদ্রুপ, সাউথইস্ট ব্যাংক ১১১ কোটি ১৮ লাখ ডলার সংগ্রহ করলেও মাত্র ৮৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলার স্থানান্তর করেছে। অন্যদিকে ন্যাশনাল ব্যাংক ৮ কোটি ৮৪ লাখ ডলার আদায় করলেও, সেই অর্থ কোম্পানির হিসাবে স্থানান্তর করেনি।
এই ঘটনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) অভিযোগ জমা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসি এই সমস্যা সমাধানে তিনটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দিলেও এখনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। পরে তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষার জন্য আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়। তবে অডিট করতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে।
চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের কাছে তদন্তের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ব্যাংক আমার রপ্তানি আয়ের অর্থ স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও আমি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আরও দাবি করেন, অতীতে ব্যাংকের প্ররোচনায় তার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ব্যাংক ঋণখেলাপি করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
এই ঘটনায় কেয়া কসমেটিকসের পক্ষ থেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালে এই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে হিসাব চূড়ান্ত করতে একটি অডিট ফার্ম নিয়োগের ব্যাপারে সম্মতি হয়। তবে প্রস্তাবিত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কেয়া কসমেটিকস অন্য একটি নিরীক্ষা ফার্ম দিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে চেয়েছিল, যা ব্যাংক গ্রহণ করেনি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিএসইসি একটি তৃতীয় অডিট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়, কিন্তু তথ্য সরবরাহ না করায় কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তালিকায় কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের নাম রয়ে গেছে, এবং ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩৫২ কোটি টাকা বলে দাবি করা হয়েছে।