বাংলাদেশ

বিপদে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন বর্তমানে পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার আধিক্য, বন উজাড়, দূষণ এবং পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াতের ফলে দ্বীপটি অন্তত ২০ ধরনের পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গড় তাপমাত্রা এখন প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তাছাড়া, দ্বীপের মাটি, পানি ও বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, অতি পর্যটন, লবণাক্ততার বৃদ্ধি, বন নিধন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, কচ্ছপের আবাসস্থল ধ্বংস, প্লাস্টিক দূষণ, মিঠাপানির সংকট, এবং জোয়ারের প্রভাব দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপর্যস্ত করেছে। দ্বীপে প্রায় সারা বছর ধরে লাখ লাখ পর্যটকের ভিড়ে স্থানীয় ১০ হাজার মানুষের জীবনযাত্রাও প্রভাবিত হচ্ছে।

দ্বীপটিকে রক্ষায় ইতোমধ্যে তিনবার পর্যটন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পর্যটন ব্যবসায়ীদের চাপে সরকার সে উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসে। সম্প্রতি, সেন্ট মার্টিনের গাছপালা ধ্বংসকারী সাদা মাছির উৎপাতে প্রায় ৩০০ নারকেলগাছ মারা গেছে। ঐতিহাসিকভাবে দ্বীপটিতে শতাধিক প্রজাতির গাছপালা ছিল, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নারকেল ও কেওড়াগাছ ছাড়া অন্য গাছগুলো বিলুপ্তির পথে।

পরিবেশবিদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, “এ ধরনের জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ দ্বীপকে রক্ষা করা জরুরি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের দ্বীপের সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়, কারণ এ ধরনের দ্বীপ গড়ে উঠতে হাজার হাজার বছর লাগে। কয়েক যুগের অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের ফলে তা কয়েক বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সেন্ট মার্টিনকে রক্ষা করার জন্য সরকারের অগ্রাধিকার থাকা উচিত।”

২০২৩ সালে সর্বশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দ্বীপটিতে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে দিনে ৯০০ পর্যটককে দ্বীপে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে এবং রাতযাপনের জন্য সরকারকে অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হবে।

তবে, দ্বীপের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পর্যটকদের দায়িত্বশীল আচরণ এবং সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দ্বীপটি রক্ষা পেতে পারে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই উদ্যোগ না নিলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সেন্ট মার্টিন থেকে প্রবাল সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button