আওয়ামী লীগপন্থী ৩,৫৭৪ জন কনস্টেবল চূড়ান্তভাবে নিয়োগ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের শেষ সময়ে দলীয় পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩,৫৭৪ জন টিআরসি (ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল) চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছে। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত এসব টিআরসি বর্তমানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, রংপুর, খুলনা, রাঙ্গামাটি ও সারদা পুলিশ একাডেমিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এ বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে দেশের ৬৪টি জেলায় চারটি পর্বে তারা দলীয় ক্যাডার হিসেবে নির্বাচন হয়, যেখানে অন্যান্য প্রার্থীদের নানা কৌশলে বাদ দেওয়া হয়।
তৎকালীন আইজিপি ও রিক্রুটমেন্ট শাখা অত্যন্ত চতুরতার সাথে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত কর্মকর্তারা বর্তমান সরকারের অধীনেও বিভিন্ন পদে বহাল আছেন বলে জানা যায়।
সর্বশেষ নিয়োগপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টরদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পুলিশ সদর দফতর তদন্ত করে, তবে রহস্যজনক কারণে টিআরসি ব্যাচসহ গত ১৬ বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৮০ হাজার কনস্টেবলের নিয়োগ বিষয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান করা হয়নি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের দলীয় পরিচয় ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যদের একটি বড় অংশ এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বর্তমান সরকারকে বিব্রত করছে। সম্প্রতি বিভিন্ন মহানগরীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ অমান্য করার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, যা ওই নিয়োগ প্রাপ্তদের দুরভিসন্ধি হিসেবে গোয়েন্দা রিপোর্টে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন, যৌথ বাহিনীর হাতে আটক, রাতে ‘মুক্তি’ ওসির কাণ্ডে তোলপাড়!
এছাড়া ৫ আগস্টের পর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কনস্টেবলদের অধিকাংশই গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা এবং তারা সাবেক ডিএমপি কমিশনারের সমর্থনে দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ পেয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, নভেম্বর মাসেই প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর ৩,৫৭৪ জন টিআরসি চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাবে। বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।
এছাড়া পুলিশ সদর দফতর থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গোপনীয়ভাবে দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করা হয়। সাবেক রেঞ্জ ডিআইজিগণ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারদের দিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ফলে গত ১৫ বছরে দলীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা পুলিশ বাহিনীর একটি বিশাল অংশে পরিণত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গত ১৫ বছরের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও বর্তমান টিআরসিদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। রাজশাহীতে এএসপি ও সাব-ইনস্পেক্টরদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ছাত্র সমন্বয়কারীদের আপত্তিতে স্থগিত করা হয়।
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত অনেকেই অবসরে গেছেন, আর অনেকেই ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্বে রয়েছেন।