দলের ভেতরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বিএনপি

বিএনপি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ইস্যুতে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈষম্যবিরোধী ও নাগরিক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে ৭ জনের একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। তবে, বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জানান যে তারা মোট ৯ জন অংশ নিয়েছিলেন।
এই বৈঠকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ এবং সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, গত ২৩ অক্টোবর তারা একটি জাতীয় ছাত্র ঐক্যের ডাক দেন, যেখানে গণতান্ত্রিক দলগুলো ফ্যাসিবাদ বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে শেখ হাসিনার পতন ঘটায়। তার মতে, ফ্যাসিবাদ বিলোপে একান্ত বাধা হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতির অপসারণে বিএনপির কাছে দ্রুততম পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিষয়ে সব গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
বৈঠকে তিনটি মূল বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়। প্রথমত, সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন এবং এটি কিভাবে ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে একটি প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করা হয়। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনের দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। তৃতীয়ত, জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে সরকার পরিচালনার ভবিষ্যৎ কাঠামো কেমন হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
বৈঠক শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, বিএনপি তাদের বক্তব্য গুরুত্বসহকারে শুনেছে এবং তাদের আলোচনার বিষয়গুলো দলীয় ফোরামে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বিএনপি পরে দলীয় সিদ্ধান্ত জানাবে বলেও বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গেও বৈঠক করেছে নাগরিক কমিটি। হাসনাত বলেন, জামায়াত এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছে এবং রাষ্ট্রপতির অপসারণের জন্য তাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। একই বিষয় নিয়ে তারা ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন এবং সেখানেও রাষ্ট্রপতির অপসারণের প্রতি সমর্থন পাওয়া গেছে।
ভবিষ্যতে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট এবং গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গেও এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান। রাষ্ট্রপতির অপসারণে এ ধরনের আলোচনা একাধারে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, সমন্বয়ক রিফাত রশিদ। জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, মুখপাত্র সামন্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
এই বৈঠকটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্গঠনে সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।