ভারতে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিনিয়োগের ওপর বিদ্যমান বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। চীনের সঙ্গে সীমান্তে টহল নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কয়েক দিন পরেই এ বক্তব্য দিলো ভারত। যেসব দেশের সঙ্গে ভারতের স্থলসীমান্ত রয়েছে, সেই দেশগুলো থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দিল্লি কিছু কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, নির্মলা সীতারমণ গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারটন বিজনেস স্কুলে বক্তব্য দেওয়ার সময় ভারতের বিনিয়োগ নীতির বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিনিয়োগ দরকার বলেই আমি চোখ বুজে যেকোনো সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) গ্রহণ করতে পারি না। কোথা থেকে এই বিনিয়োগ আসছে, তা ভুলে গিয়ে বা সেদিকে উদাসীন থেকে বিনিয়োগ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
হিমালয় সীমান্তে ভারত ও চীনের মধ্যে চার বছর ধরে চলমান সামরিক অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্ত টহল নিয়ে এই চুক্তি হয়েছে। ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত ঘটে, যাতে উভয় পক্ষের সেনা নিহত হন। এর পর থেকে দিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে পুঁজি, প্রযুক্তি ও মেধার বিনিময় কার্যক্রমে শ্লথগতি দেখা যায়। তবে এই সর্বশেষ চুক্তি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুই দেশ ভারত ও চীন। কিন্তু সীমান্ত বিবাদের কারণে তাদের সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়েছে, এমন সময় যখন বৈদ্যুতিক গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অত্যাধুনিক খাতগুলোতে চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দুই দেশের সহযোগিতায় এসব খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
২০২০ সালের ওই সংঘাতের পর ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর বিনিয়োগ প্রস্তাবের ওপর কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ প্রস্তাবের নিরাপত্তা ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াও জটিলতর করা হয়। যদিও ভারত সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট দেশের নাম উল্লেখ করেনি, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বিধিনিষেধ মূলত চীনা কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করেই আরোপ করা হয়েছে, যাতে তারা ভারতে ব্যবসা অধিগ্রহণ করতে না পারে বা বিনিয়োগ করতে না পারে।
এই কঠোর বিধিনিষেধের কারণে চীনের বড় বড় কোম্পানি, যেমন বিওয়াইডি বা গ্রেট ওয়াল মোটর, ভারতে শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে চীনা অংশগ্রহণও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে বিনিয়োগে বিধিনিষেধ আরোপের পরও, ভারতের চীন থেকে পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২০ সালের সংঘাতের পর থেকে চীনা পণ্যের আমদানি ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে দিল্লির বাণিজ্য ঘাটতি ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। গত বছর ভারত সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করেছে চীন থেকে, এবং চীনই ছিল ভারতের শিল্পপণ্যের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ।