ভোগান্তি কমাতে অকার্যকর ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড ব্যবস্থাই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

টাকা জমা দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষাও শেষ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এখনো একটি কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি: ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
এই সাধারণ কাজটি করতে ব্যর্থ হওয়ায় সোয়া ছয় লাখেরও বেশি মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে।
এর মধ্যে কিছু মানুষ তিন বছর ধরে অপেক্ষা করছেন।
এই ভোগান্তির শুরু ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সময়।
অভিযোগ রয়েছে, তখন পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার চেষ্টার ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সেই থেকে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
পরবর্তী ৮ আগস্ট নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
এই নতুন সরকার ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড ব্যবস্থা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
এবং এর বদলে সাধারণ পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) কার্ড দিতে হবে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, নতুন আবেদনকারীদের পিভিসি কার্ড দেওয়া হবে,
কিন্তু পুরোনো আবেদনকারীদের আগের কার্ডই ফিরিয়ে দিতে হবে।
তাদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে কার্ড পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহসানুল হক টেক অরবিটকে জানিয়েছেন,
পুরোনো ঠিকাদার কার্ড নিয়ে এসেছে এবং ধীরে ধীরে সমস্যাগুলো সমাধান হবে।
তিনি বলেন, পিভিসি কার্ড চালুর মূল লক্ষ্য দ্রুত প্রিন্ট করা
এবং এতে কিউআর কোড থাকবে, যা লাইসেন্সের সঠিকতা যাচাইয়ে সহায়ক হবে।
বিআরটিএর পুনর্গঠন অত্যাবশ্যক।
নতুন সরকার যদি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যবস্থা না নেয়,
তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে এই গণ-অভ্যুত্থান শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন হিসেবে ধরা হবে।
স্মার্টকার্ড যথাসময়ে না পেয়ে বিআরটিএ গ্রাহকদের কাগজের লাইসেন্স দিচ্ছে।
এটি দেখালে ট্রাফিক পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধা পাচ্ছে।
তবে লাইসেন্স নিয়ে বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন,
কারণ স্মার্টকার্ড ছাড়া তারা বিদেশে যেতে পারছেন না।
কুমিল্লার আবদুল মতিন সৌদি আরবের ভিসা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন।
তিনি জানান, তার লাইসেন্স সংশোধনের জন্য দালালের মাধ্যমে ১৩ হাজার টাকা দিয়েছেন
এবং তিনি এখন কার্ডের প্রিন্টিংয়ের অপেক্ষায় আছেন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রভাবশালী আমলাদের এবং বিদেশগামীদের অগ্রাধিকার দিয়ে কার্ড দেওয়া হচ্ছে।
বিদেশগামীদের জন্য বিআরটিএর চেয়ারম্যানের অফিসে ভিসা দেখিয়ে তালিকাভুক্ত হতে হয়,
কিন্তু এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন।
যারা জানেন, তাদের জন্য বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়।
ঢাকার পল্টনের একটি ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানের মালিক ফুজায়েল আহমেদ জানান,
তার প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নেওয়া অনেকেই লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষা করছেন,
কেউ কেউ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন।
বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০২১ সালে জানায়,
ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে গিয়ে ৮৩.১ শতাংশ পরিবার দুর্নীতির শিকার হয়েছে।
সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন,
তিনিও ভুক্তভোগী।
লাইসেন্স করাতে তার গাড়ির চালককে সাতবার ছুটি নিতে হয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যে, বিআরটিএর কার্যক্রমে দুর্বলতার কারণে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠনের দিকে গুরুত্ব না দিলে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে।